‘ডেঞ্জারজোন’ হিসেবে পরিচিত ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে ফেনীর অনেক বাসিন্দা গ্রামের বাড়িতে আসায় করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঝুঁকিতে রয়েছে ফেনী। এখন পর্যন্ত জেলায় কোনো আক্রান্ত রোগী শনাক্ত না হলেও এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ও উদ্বেগ-উৎকন্ঠা কিছুতেই কাটছে না।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে লকডাউন অমান্য করে অসংখ্য মানুষ ফেনীর গ্রামের বাড়িতে ছুটছেন। এ রকম অন্তত ৩০ জনের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তাদের হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করার জন্য মনিটরিং করতে ওই তালিকা জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে। এদের অনেকেই হোম কোয়ারেন্টাইন না মেনে গ্রামাঞ্চলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কেউ কেউ দোকানপাট ও রাস্তাঘাটে অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
সিভিল সার্জন ডা. সাজ্জাদ হোসেন জানান, মানুষ গ্রামে ছুটে আসায় ফেনী জেলা করোনা সংক্রমণ ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে হোম কোয়ারেন্টাইন মেনে চললে ঝুঁকি কেটে যাবে। ইতোমধ্যে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া দুই ব্যক্তির শরীরে করোনা শনাক্ত হয়নি।
ফেনী সদর উপজেলার ফাজিলপুর, লেমুয়া ও ছনুয়া ইউনিয়নে নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর থেকে আসা সাতটি পরিবারকে লকডাউন করা হয়েছে। ফুলগাজী উপজেলার জয়পুর, পূর্ব ঘনিয়ামোড়া, মনতলা, মুন্সিরহাট ইউনিয়নের ফতেহপুর, উত্তর জাম্বুরা গ্রাম, জিএমহাট ইউনিয়নের শ্রীচন্দ্রপুর, দরবারপুর ইউনিয়নের উত্তর শ্রীপুরে নয়টি বাড়িতে লাল পতাকা টাঙিয়ে তাদের মনিটরিংয়ে রেখেছে উপজেলা প্রশাসন।
সোনাগাজীর আমিরাবাদ ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের চরকৃষ্ণজয় গ্রামের গুচ্ছগ্রাম আশ্রয়ণ প্রকল্পে একজন, পশ্চিম আহম্মদপুরে তিনজন নারায়ণগঞ্জ থেকে ফেনীর বাড়িতে আসায় শুক্রবার ওই চারজনের বাড়ি লকডাউন ঘোষণা করা হয়। তারা যেন খাদ্য সামগ্রী কেনার জন্য বাড়ি থেকে বের হতে না হয় সেজন্য ইউপি চেয়ারম্যান জহিরুল আলম জহির খাদ্য সামগ্রী দেন।
একই উপজেলার চর চান্দিয়া ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর ও মতিগঞ্জ ইউপির স্বরাজপুর, ভাদাদিয়া ও ভোয়াগ এলাকায় গ্রামীণ সড়কে বাঁশ বেঁধে ও গাছ ফেলে স্বেচ্ছায় লকডাউন করেছে এলাকাবাসী।
অন্যদিকে ছাগলনাইয়ার রাধানগর ইউনিয়নের মোকামিয়া, পূর্ব কাশিপুর, নিজপানুয়া, মহামায়া ইউনিয়নের জয়নগর, পাঠাননগর ইউনিয়নের মধ্যম শিলুয়া, পৌরসভার পূর্ব ছাগলনাইয়াসহ ১৬টি বাড়িতে লাল পতাকা টাঙিয়ে দেয়া হয়।
এছাড়া এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে, এক উপজেলা থেকে আরেক উপজেলায় প্রবেশ না করতে কঠোর সতর্কতাসহ নানা নির্দেশনা দিয়েছেন সদর আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেও সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুজজামান বলেন, যারা ঢাকা কিংবা নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে গোপনে গ্রামের বাড়িতে আসছেন তাদের খোঁজ পাওয়া মাত্রই পৃথকভাবে রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে তিনি এলাকাবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন।